তামাকপণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন বিষয়ক কমপ্লায়েন্স সার্ভে ফলাফল প্রকাশ

৭৫% তামাকপণ্যে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই, বিড়ির ক্ষেত্রে এ হার শূন্য

Picture

১৯ মার্চ ২০১৬ থেকে সকল তামাকপণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক হলেও গবেষণা ফলাফলে দেখা গেছে মোট ৭৪.৮% (১১১১) তামাকপণ্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই। মাত্র ২৫.২% (৩৭৪) তামাকপণ্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর উপস্থিতি চোখে পড়েছে।

গবেষণায় প্রাপ্ত ১৪ ব্রান্ডের ৮৮টি বিড়ির প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবাণীর উপস্থিতি শূন্য শতাংশ। গবেষণায় ৩৫টি ব্রান্ডের ৭০০টি সিগারেট প্যাকেটের মধ্যে ৫৫.৩% প্যাকেটেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি। ৬টি সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টিই সচিত্র সতর্কবাণী ছাড়া সিগারেট বাজারজাত করছে।

ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ক্ষেত্রেও এই প্রতিপালনের হার খুবই উদ্বেগজনক। জর্দায় ৯১.৬ শতাংশ এবং গুলের ক্ষেত্রে ৮৭.৯ শতাংশ কৌটাতেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী  পাওয়া যায়নি।

গবেষণায় প্রাপ্ত ১০০টি জর্দা কারখানার মধ্যে মাত্র ১৪টি সচিত্র সতর্কবাণীসহ জর্দা বাজারজাত করছে। একইভাবে ১৩টি গুল কারখানার মধ্যে মাত্র ১টি কারখানা সচিত্র সতর্কবাণীসহ গুল বাজারজাত করছে।

অন্যদিকে যেসব তামাকপণ্য সচিত্র সতর্কবাণীসহ পাওয়া গেছে সেগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিধান অনুসরণ করা হয় নাই।

গবেষণায় ৮টি বিভাগীয় শহরের মোট ১২০টি দোকানে তিন ধরনের তামাক বিক্রেতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় যথা: (ক) প্রধানত সিগারেট বিক্রেতা; (খ) প্রধানত বিড়ি এবং স্বল্পমূল্যের সিগারেট বিক্রেতা; (গ) প্রধানত ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বিক্রেতা।

আজ ১৯ এপ্রিল ২০১৬, মঙ্গলবার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে তামাক বিরোধী সংগঠনসমূহের পক্ষে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, সীমান্তিক, উবিনীগ, ইসি বাংলাদেশ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, নাটাব, বিসিসিপি, প্রত্যাশা, এইড ফাউন্ডেশন ও প্রজ্ঞা “তামাকপণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন বিষয়ক কমপ্লায়েন্স সার্ভে ফলাফল প্রকাশ” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন হাসান শাহরিয়ার, কোঅর্ডিনেটর, প্রজ্ঞা। অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক, প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ; মো: শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ কান্ট্রি এডভাইজার, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস; এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, টেকনিক্যাল এডভাইজার, দি ইউনিয়ন; ডা. মাহফুজুল হক ভুঁইঞা, গ্রান্টস ম্যানেজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে); আরিফ সিকদার, নির্বাহী পরিচালক, ইসি বাংলাদেশ, হেলাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, প্রত্যাশা।

সার্বিকভাবে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের চিত্র হতাশাজনক। নিম্নস্তরের সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুল যেগুলো মূলত নিরক্ষর ও নিম্নআয়ের মানুষ বেশি ব্যবহার করে সেসব ক্ষেত্রে আইন প্রতিপালনের হার আরও বেশি হতাশাজনক। অথচ ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী এই শ্রেণির মানুষের জন্য বেশি ফলপ্রসূ।

তামাক কোম্পানিগুলোর এযাবতকালের কার্যক্রম থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তামাকপণ্যের প্যাকেট বা মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী না ছাপার জন্য তামাক কোম্পানির প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তাই শক্তিশালী নজরদারির অভাব তামাক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কার্যকর এই হাতিয়ারের বাস্তবায়ন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

সুপারিশ

  • তামাক কোম্পানিগুলোকে প্যাকেট বা কৌটার অন্যূন ৫০ ভাগ স্থান জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণে বাধ্য করা;
  •  আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা;
  • মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বিহীন তামাকপণ্য ধ্বংস করা এবং বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
  • মোবাইল কোর্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং আইন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি কার্যকর করা;