সংলাপ :দুই দলই ইতিবাচক

দুই নেত্রীকে জন কেরির চিঠি

সমকাল প্রতিবেদক
সংলাপে বসতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির আহ্বানে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই শর্ত জুড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ তাদের অবস্থানের কোনো নড়চড় হয়নি।
সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সংসদ বসছে। সেখানে সংলাপ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বিএনপি বলেছে,
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিলেই সংলাপ হতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের দূতিয়ালির পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সংলাপের তাগিদ দিয়ে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজীনা এই চিঠি পেঁৗছে দিয়েছেন।
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ক্যালি ম্যাকার্থি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে দেওয়া জন কেরির চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কেরি দুই নেত্রীকে ইতিবাচক সংলাপে বসতে উৎসাহ জুগিয়েছেন এই চিঠির মাধ্যমে।
চিঠিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদ্ধতি খুঁজে বের করতে কার্যকর সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আর কালক্ষেপণ না করে সংলাপ কিংবা আলোচনার মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সমঝোতায় পেঁৗছানোটা জরুরি বলে চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, চিঠিতে নির্বাচন সামনে রেখে দেশে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ জানিয়েছেন, তিনি চিঠির বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা বহুল আলোচিত সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, আলোচনা যে হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। মতিয়া চৌধুরী আরও বলেছেন, ১২ সেপ্টেম্বর সংসদ বসছে। সেখানে আলোচনা হতে পারে। অবশ্য বিএনপি আদৌ আলোচনা চায় কি-না, এ নিয়ে সন্দেহে আছেন মতিয়া।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও দফতরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই আলোচনা করে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বিদেশি কারোর পরামর্শের দরকার নেই। আর সংসদ অধিবেশন ঘনিয়ে আসছে। বিএনপি এগিয়ে এলে সংসদে আলোচনা হতে পারে। তবে আলোচনার পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। বিরোধী দলকেও আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জনগণ সাংবিধানিকভাবে বিরোধী দলের ভূমিকাও দেখতে চায়।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহ রয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে সংলাপে বসার জন্য বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংলাপের পরিবেশ নষ্ট করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। তিনি প্রকাশ্যে সরকার পতনের হুমকি দিয়েছেন। ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম বেঁধে দিয়ে সংলাপের পরিবেশ ভণ্ডুল করেছেন।
এদিকে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তারা সংলাপের জন্য প্রস্তুত। তবে সংলাপের আগে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে নেওয়ার শর্ত মানতে হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশের জনগণের সঙ্গে সব গণতান্ত্রিক দলের নেতারাও উদ্বেগে আছেন। সবাই সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান। বিএনপিও সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা চায়। তবে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি সরকার মেনে নিলেই সংলাপ হতে পারে। তিনি আরও বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক মতভেদ দূর করার সময় এখনও আছে। নিশ্চয়ই সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিদেশিরা অনেক আগে থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। জন কেরির চিঠিতেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় সংলাপে বসতে প্রস্তুত। সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া দিলে তারা যে কোনো স্থানে সংলাপে বসবেন।
সংবিধান অনুযায়ী ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলেছেন, নির্বাচন আয়োজনের বেলায় সংবিধান থেকে এক চুলও নড়চড় করা হবে না। অবশ্য এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিরোধী দলের। তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর থেকেই তা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
প্রধান দুই দলের এমন অনড় অবস্থানের মধ্যেই গত ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে টেলিফোন করে নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। তিনি দুই নেত্রীকেই বলেছেন, বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে আগ্রহী জাতিসংঘ।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা এবং সংলাপের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কখনও প্রকাশ্যে, কখনও আড়ালে-আবডালে কূটনৈতিক তৎপরতাও চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সফর করে গেছে। একই বিষয় নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল। তারা ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিএনপির সঙ্গেও বৈঠক করবে তারা।