সংবিধান নয় আরপিও সংশোধনের চিন্তা আওয়ামী লীগের

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির উদ্যোগ
শাহেদ চৌধুরী
সংবিধান নয় আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির চিন্তা-ভাবনা করছে আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার রাজধানীর ইন্দিরা রোডে আইনমন্ত্রীর বাসভবনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক জরুরি বৈঠকে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খুব কম সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আইনমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের পাঁচ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এইচটি ইমাম, ড. মসিউর রহমান, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজেসলেটিভ ও ড্রাফটিং বিভাগের সচিব শহিদুল হক এবং আওয়ামী লীগ সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা পরিষদের তিন নেতা এ বৈঠকের বরাত দিয়ে সমকালকে জানিয়েছেন, সংবিধানে কাটাছেঁড়া কম করাই সুখকর হবে বলে বৈঠকে
বলা হয়েছে। এ কারণে সংবিধানে পরিবর্তন না এনে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করাই গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে বলে বৈঠকে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, নির্বাচনের সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চালিকা শক্তি থাকবে নির্বাচন কমিশন। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। অবশ্য এ জন্য আরপিও এবং আচরণ বিধিমালা সংশোধন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন আরপিওতে সংশোধনী আনার জন্য একটি প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ প্রস্তাব নিয়ে সরকার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। শুক্রবারের বৈঠকেও অল্প-বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নেতারা বলেছেন, আরপিও পরিবর্তন এনে প্রার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিন বছর পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারার বাধ্যবাধকতা শিথিল করা যেতে পারে।
বৈঠকে আরপিও অনুযায়ী লাভজনক পদের সংজ্ঞা পরিবর্তন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের বিধিমালায় পরিবর্তন এনে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী এলাকায় জনসভা করা কিংবা জনসভায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
২০০৯ সালে প্রণীত আরপিও কাঠামো প্রায় অবিকল রাখার পরামর্শ দিয়ে বৈঠকে বলা হয়েছে, একটি আসনে একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একজনের বেশি প্রার্থী দেওয়া ঠিক হবে না। এর যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, বর্তমান আরপিও অনুযায়ী একটি আসনে একটি রাজনৈতিক দল একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নের পর একজনকে মনোনয়ন দিলে বঞ্চিত প্রার্থীরা আদালতে গিয়ে অন্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এতে বিভ্রান্তি বাড়বে।
বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। সংবিধান নিয়ে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সংসদ অধিবেশন মুলতবি রেখে বিদ্যমান সংবিধানে যে ধারা অব্যাহত আছে সেটিকে সংশোধনের কথা বলা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বেশিরভাগ নেতাই বলেছেন, ১৯৭৩ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছিল আগামী নির্বাচনও সেভাবে হবে।
বৈঠকে বলা হয়েছে, নতুন ম্যান্ডেটের জন্য বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা সংবিধানের বর্তমান বিধানের অধীনেও সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের দাবি না মেনে এবং নিজে পদত্যাগ না করেও সংসদ ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতিকে লিখিত পরামর্শ দিতে পারেন। এর ফলে তিনিও বঙ্গবন্ধুর মতো বলতে পারবেন, ‘আমরা নতুন ম্যান্ডেট পেতে সংসদ ভেঙে দিয়েছি।’ তবে এমন সিদ্ধান্ত ২৫ অক্টোবরের আগেই নিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে তা রাজনৈতিকভাবে কতটা ইতিবাচক হবে, সেটা খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে বৈঠকে।