সংবিধানে অস্পষ্টতা রেখে সরকার লুকোচুরি খেলছে : ফখরুল

পুলিশি বাধায় ছাত্রদলের শোভাযাত্রা কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। তবে নির্ধারিত স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে বিএনপির অন্যতম এই সংগঠন। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মিছিল-শোভাযাত্রায় বাধা দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ ৩০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
এদিকে মিছিল-শোভাযাত্রায় পুলিশি বাধা ও নেতা-কর্মী আটকের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘এখনো সময় আছে, আপনাদের বিদায়কালকে আর বেদনাদায়ক করে তুলবেন না। আপনারা সংবিধানে অস্পষ্টতা রেখে লুকোচুরি খেলে ফাঁকা মাঠে গোল করতে চান। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না।’
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ষষ্ঠ কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে গতকাল সোমবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ও শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল। গত ২৮ আগস্ট ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সমাবেশের অনুমতি মিললেও নিরাপত্তা ও যানজটের কারণ দেখিয়ে শোভাযাত্রায় অনুমতি দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশ এবং শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন সড়কের বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন ছিল।
এদিকে ছাত্রদলের সমাবেশকে কেন্দ করে গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে আসার পথে নেতা-কর্মীরা পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত ও অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে ছাত্র সমাবেশ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ বিজয়নগর, মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশমুখী মিছিলে লাঠিচার্জ করে। একপর্যায়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। এ নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় পুলিশ ৩০ জন ছাত্রদল নেতা-কর্মীকে আটক করে। এসব ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে নগরজুড়ে। এ পরিস্থিতিতে শাহবাগ, পল্টন, কাকরাইল, মগবাজার, বাংলা মোটরসহ বেশ কয়েকটি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ডিএমপির উপকমিশনার (ডিসি মিডিয়া) মাসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, নিরাপত্তা ও যানজটের কথা চিন্তা করে ছাত্রদলকে মিছিল-শোভাযাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ডিএমপি রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান বলেন, ছাত্রদলের খণ্ড খণ্ড মিছিলের কারণে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মিছিলের চেষ্টা করায় তাদের বাধা দেয় পুলিশ। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে কিছু নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জনগণসহ সুশীল সমাজ নির্দলীয় সরকার ছাড়া এ দেশে নির্বাচন চায় না। সরকারকে বলব, আপনাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এখনো সময় আছে, আপনাদের বিদায়কালকে আর বেদনাদায়ক করে তুলবেন না। আপনারা সংবিধানে অস্পষ্টতা রেখে লুকোচুরি খেলে ফাঁকা মাঠে গোল করতে চান। দেশের জনগণ খালি মাঠে কাউকে গোল করতে দেবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা অসংলগ্ন কথা বলছেন। একজন মন্ত্রীর সঙ্গে অন্যজনের বক্তব্যের কোনো মিল নেই। তারা সংবিধানে অস্পষ্টতা রেখে দিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, অস্পষ্টতার সুযোগে লুকোচুরি করে একটি নির্বাচন করা।’ খালেদা জিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) ভয় পান কেন? নির্বাচনের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে আসুন নির্বাচন করি- কে জিতে দেখা যাবে। কিন্তু সরকার তা চায় না।’ সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এখন থেকে মিছিল-শোভাযাত্রা বন্ধ করতে বললে আমরা মানব না। সমাবেশ বন্ধ করতে বললেও বন্ধ করব না।’
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সরকার অপপ্রচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এর তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে তন্ন তন্ন করে তারেক রহমানের সম্পদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধান করেছে সরকার। কিন্তু কোথাও কোনো অ্যাকাউন্ট খুঁজে পায়নি তারা। তারেক রহমানকে ভয় পায় বলেই সরকার তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার করছে।
ছাত্রদলের এই ছাত্র সমাবেশে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, প্রকৌশল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের হাজার হাজার নেতা-কর্মী তারেক রহমানের প্রতিকৃতি নিয়ে যোগ দেয়। নেতা-কর্মী নিয়ে সমাবেশস্থলে আসার সময় মৎস্য ভবন, শাহবাগ, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করেছে বলে ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেন। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি জানান।
সংগঠনের সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক ছাত্রদল নেতা শামসুজ্জামান দুদু, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবীর খোকন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কামরুজ্জামান রতন, শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, এ বি এম পারভেজ রেজা, ওমর ফারুক সাফিন, রাজিব আহসান, ওবায়দুল হক নাসির, মহিদুল হাসান হীরু, ইসহাক সরকার, আবুল মনসুর খান দীপক প্রমুখ।