বাংলাদেশি পণ্য আজ থেকে বাড়তি সুবিধা পাবে না

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) স্থগিতে ওবামা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত আজ সোমবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আজ থেকে কোনো বাংলাদেশি পণ্য বাড়তি কোনো সুবিধা পাবে না।

জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে ও শ্রমমান সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার ইতিমধ্যে ১২টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এ বিষয়ে শুনানির আগে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না তা সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেই যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। প্রসঙ্গত সংশোধিত শ্রম আইনসহ জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়ে ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে শুনানি অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকার এবং শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না অভিযোগ এনে গত ২৭ জুন জিএসপি সুবিধা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেয়।

এসব বিষয়ে গতকাল দুপুরে শ্রম মন্ত্রণালয়ে পোশাকশিল্প-সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে শ্রমসচিব তাঁদের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বস্ত্র শাখা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পুনরুদ্ধার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়।

বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাময়িকভাবে হলেও জিএসপি উঠে যাওয়ায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো আমাদের ভাবমূর্তির। আর প্রত্যক্ষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে জিএসপির আওতায় যেসব পণ্য রপ্তানি হতো, যেমন সিরামিক, প্লাস্টিক, টেরিটাওয়েল ইত্যাদি রপ্তানিতে আর বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টিই আমাদের বিপক্ষে গেল। তবে সবাই মিলেই চেষ্টা করছি জিএসপি পুনরুদ্ধারের।’

জিএসপি সুবিধা স্থগিতের পর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শ্রম আইন সংশোধন ও পাস, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের চাকরির নিশ্চয়তা বিধান, আগে ছাঁটাই করা ইউনিয়ন নেতাদের চাকরি পুনর্বহাল, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওমেন সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস) এবং সোশ্যাল একটিভিটিস ফর দ্য ইনভায়রনমেন্টের (এসএএফই) নিবন্ধন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার, প্রধান কলকারখানা পরিদর্শক অধিদপ্তরে চারজন পরিদর্শক নিয়োগ, ৩৫ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন ইত্যাদি। এ ছাড়া একটি প্রকল্পের আওতায় ২৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ও ২০০ জন পরিদর্শক নিয়োগে কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কারখানা পরিদর্শক অধিদপ্তরে ২০০ পরিদর্শক নিয়োগের শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, আমিনুল হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজন মুস্তাফিজকে গ্রেপ্তারের পুরস্কার ঘোষণা করে তার ছবিসহ পত্রিকায় দুবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কল্পনা আক্তার ও বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পোশাক খাতের ৪২ ট্রেড ইউনিয়নকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে শ্রমসচিব মিকাইল শিপার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্ত দ্রুত পালনের চেষ্ট করছি। তবে কারখানা পরিদর্শনের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। সারা দেশে চার হাজারের মতো পোশাক কারখানা রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলো কারখানা পরিদর্শনের কাজ শেষ করতে পারব কি না তা নভেম্বরে বলা যাবে।

সূত্রমতে, গত বছর জিএসপি সুবিধার আওতায় তিন কোটি ৪৭ লাখ ডলারের তামাক, ক্রীড়া সরঞ্জাম, চীনা মাটির তৈজসপত্র ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়েছে। এতে শুল্ক ছাড় পাওয়া গেছে প্রায় ২০ লাখ ডলার।

জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়ে আগামী ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। জিএসপি ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে শ্রমমান সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মূল্যায়ন হবে শুনানিতে। বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপ সন্তোষজনক মনে হলে যুক্তরাষ্ট্র এ সুবিধা ফিরিয়ে দিতে পারে। আর পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলে ছয় মাস পর অর্থাৎ আগামী বছরের জুনে ফের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছিল।