ঢাকায় ফের যুবলীগ নেতা হত্যা

সমকাল প্রতিবেদক
রাজধানীর পল্লবীতে প্রকাশ্যে শাহ আলী রকি (২৫) নামের এক যুবলীগ নেতাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে। হত্যার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্বজনদের দাবি, এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, দলীয় কোন্দল বা ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঝুট ব্যবসা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ বিরোধ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে স্থানীয় যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা চারটি চাপাতি। অন্যদিকে রকির বিরুদ্ধেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
নিহতের বড় ভাই শাহপরান রনি সমকালকে জানান, রকি রাজধানীর ৯২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের পশ্চিম ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। তিনি মিরপুর-৭ নম্বর সেকশনের মিল্ক ভিটা সড়কের ৮৩৫/১ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। পাশাপাশি তিনি গার্মেন্টপণ্যের ব্যবসা
করতেন।
এর আগে গত ৩০ জুলাই রাতে গুলশানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন খান মিল্কীকে ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর একদিন পর ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ক্রসফায়ারে নিহত হন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রকিকে মোবাইলে ফোন করে বাসা থেকে ডেকে নেওয়া হয়। তিনি হেঁটে বাড়ির অদূরে ৭ নম্বর সেকশনের ৪ নম্বর সড়কে পেঁৗছলে তার ওপর হামলা চালানো হয়। মোটরসাইকেলে আসা চার সন্ত্রাসী তাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। তার গলা, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় রাস্তার পাশের দোকানগুলো খোলা ছিল। সবার সামনে এ ঘটনা ঘটলেও ভয়ে কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। পরে আশপাশের লোকজন ও স্বজনরা মিলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সকাল ১১টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বড় বোন অবনী জানান, সাড়ে তিন বছর আগে বিয়ে করেন রকি। শান নামের প্রায় দু’বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে তার। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রকি ছিলেন সবার ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রা????হ্মণবাড়িয়ার কসবায়।
এর আগে ২০০১ সালে রকির মামার শ্যালক তারিককে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা এবং আরও বেশ কয়েকজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা।
পুলিশের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার কামাল হোসেন সমকালকে বলেন, ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে। তবে হত্যায় জড়িতরা রাজনৈতিক দলের কর্মী। ব্যবসায়িক বিরোধের কারণেও তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। ঘটনাস্থলে দুই জোড়া স্যান্ডেল এবং অদূরবর্তী একটি স্থান থেকে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা চারটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
পল্লবী থানার ওসি আবদুল লতিফ শেখ সমকালকে বলেন, হত্যার সঙ্গে প্রতিপক্ষের যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় কয়েক কর্মীর সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের একজন যুবলীগ ও অন্যজন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী। ইতিমধ্যে হত্যায় জড়িত সবার নাম-ঠিকানা পেয়েছে পুলিশ। শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
পুলিশ জানায়, নিহত রকির বিরুদ্ধেও এলাকায় নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। চাঁদাবাজি ও পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে।