ঝড়ে ছিঁড়েছে বিদ্যুতের তার, দুদিনেও কাটেনি আঁধার

curent

ঝড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে যাওয়ার দুই দিনের বেশি সময় পার হলেও এখনো তা মেরামত করা হয়নি। এতে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ১৪টি উপজেলার লাখো মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

লালমনিরহাট গ্রিড উপকেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী আবদুল মান্নানের ভাষ্য, গত শনিবার রাত নয়টার দিকে ঝড়ের কারণে তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ সরবরাহের তার ছিঁড়ে যায়। এতে দুই জেলার ১৪টি উপজেলার মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ছিঁড়ে যাওয়া তারটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার ৪৫ মিটার। এই তার দিয়ে এক লাখ ৩২ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সরবরাহ হতো।

আবদুল মান্নানের দাবি, ঘটনার পর স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা মেরামতের কাজ শুরু করেন। তাঁদের পক্ষে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পরে ঢাকা ও বগুড়া থেকে প্রকৌশলীরা এসে মেরামতের কাজ শুরু করেন।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তারটি মেরামতের জন্য ঢাকা থেকে লালমনিরহাটে এসেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের প্রধান প্রকৌশলী কামরুল আহসান। গতকাল  তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে মেরামতকাজের ৪০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। কখন থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে—এ প্রশ্নের জবাবে কামরুল বলেন, এ কাজের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করা যায় না।

কুড়িগ্রাম জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রামে ১৯ হাজার ৮৫ জন নিয়মিত বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। লালমনিরহাটের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসনাত জামানের তথ্যমতে, লালমনিরহাটে ১৮ হাজার ৪৯৩ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন।

বিদ্যুতের অভাবে সংরক্ষণে রাখা অনেক ওষুধ ও পচনশীল জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লালমনিরহাট জেলা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সংরক্ষণশালার তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, ২৪ মে বেলা দুইটায় ১৯ হাজার ভায়াল ইপিআই ভ্যাকসিন কোল্ড বক্সে ঢোকানো হয়েছে। এগুলো পরবর্তী ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকবে, অর্থাৎ ২৮ মে দুইটা পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী থাকবে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ চালু না হলে, এগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন বলেন, জেলায় প্রায় ২ হাজার ৮০০ ওষুধের দোকানে ফ্রিজে ভ্যাকসিন-সাপোজিটর রাখা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোর অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।

বিদ্যুৎ না থাকায় গবাদিপশুর বিভিন্ন ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে। লালমনিরহাট পোলট্রি ভ্যাকসিন বিক্রেতা আয়নাল হকের তথ্য, ৩৫টি দোকানে পোলট্রি ভ্যাকসিন বিক্রি হয়। এসব দোকানে ফ্রিজে রক্ষিত ওষুধের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে।

লালমনিরহাট শহর ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই বন্ধ বয়েছে। বাকিরা জেনারেটরের সাহায্যে বিকল্প বিদ্যুতের সংস্থান করেছে। বৈদ্যুতিক চার্জে চলা ইজিবাইক তেমন চলছে না।

লালমনিরহাট শহরের সাপটানা বাজার এলাকার আসমানি ভ্যারাইটিস স্টোরের মালিক আবু হোসেনের দাবি, তাঁর দোকানের ডিপফ্রিজে রাখা মিষ্টি, দই, রসগোল্লা, আইসক্রিম, কেক ও চকলেট ইত্যাদি পণ্য নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

শহরের কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় মোমের দামও বেড়েছে।

বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকে আবার নতুন ব্যবসা খুলেছেন। জেনারেটরের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে মোবাইল ও ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা করছেন। প্রতিটি মোবাইল চার্জের জন্য ১৫ থেকে ২০ টাকা করে নিচ্ছেন। ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জের জন্য গুনতে হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০-২০০ টাকা।
শুধু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই নয়, নষ্ট হয়েছে বাসার ফ্রিজে রাখা খাবার। শহরের আদর্শপাড়ার বাসিন্দা গৃহিণী মাজেদা বেগম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস নষ্ট হওয়ার জোগাড়।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সামান্য তার ছিঁড়লে যদি বিদ্যুতের এ অবস্থা হয়, তাহলে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে মানুষের কী হবে, ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে তিনি ঊর্ধ্বতন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে জানান।