চবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সহকারী প্রক্টরসহ আহত ১৮

চবি প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) গতকাল শনিবার ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্রসহ ১৮ জন আহত হয়েছেন। ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও অর্ধশতাধিক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বর্তমানে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করলেও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ক্যাম্পাস। এদিকে সংঘর্ষের পর বিশ্রামাগারে অস্ত্র রাখার সময় অসাবধানতায় গুলিতে কব্জি উড়ে গেছে দিদারুল হক নামের এক পুলিশ কনস্টেবলের।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন, চবি ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক জালাল আহমেদ, আইন বিভাগের জাহেদ, রসায়ন বিভাগের আকাশ মিত্র, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দুর্জয়, ফরহাদ ও প্রদীপ চক্রবর্তী, অর্থনীতি বিভাগের সৈকত, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অমি, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সিয়াম, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রাব্বী, ইতিহাস বিভাগের মুন্না, নৃবিজ্ঞান বিভাগের মিজান, ইতিহাস বিভাগের ইফতেখার, ইমন ও আরাফাত, দর্শন বিভাগের নীরব এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের হাকিম। এর মধ্যে ইমন ও নীরব, আরাফাত, ইফতেখার ও হাকিমের অবস্থা গুরুতর। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ব্যাপারে চবি উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ সমকালকে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে বৈঠকের পর আমরা তদন্ত কমিটি গঠনসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় কাটা পাহাড় রাস্তায় মিজান নামে নগর আওয়ামী লীগ নেতা আজম নাসির উদ্দিন সমর্থিত ‘সিক্সটি নাইন’ গ্রুপের এক কর্মীকে মারধর করে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত ‘ভিএক্স’ গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এর জের ধরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদের সামনে সিয়াম নামে এক ‘ভিএক্স’ কর্মীকে মারধর করে সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মীরা। এরপর শুরু হয় দুই পক্ষে উত্তেজনা।
সিক্সটি নাইন গ্রুপ অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ঝুপড়িতে। ভিএক্স গ্রুপ অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের সামনে। আজম নাসির সমর্থিত সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপু ও নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবএিম মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত ভিএক্স গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় চবি ছাত্রলীগের অপর সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম। এরপর সিয়ামকে মারধরের পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহজালাল হল থেকে ভিএক্স গ্রুপ কলা অনুষদের ঝুপড়ি দোকানে লাঠিসোটা নিয়ে সিক্সটি নাইন গ্রুপকে ধাওয়া দেয়। ধাওয়া খেয়ে সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়। ভিএক্স অবস্থান নেয় শাহ জালাল হলের সামনে। দুই পক্ষে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপক্ষ অপর পক্ষকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ ঘটনায় ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র। আহত হয় ভিএক্স গ্রুপের তিন নেতাকর্মী।
এ সময় হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি নিজাম উদ্দিন ও হাটহাজারী থানার ওসি লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ১০ রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
এরপর ভিএক্স অবস্থান নেয় শাহজালাল হলের সামনে। সিক্সটি নাইন অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয় রেল ষ্টেশনে।
এ ঘটনার দেড় ঘণ্টা পর দুপুর আড়াইটার দিকে ভিএক্স গ্রুপের রাব্বী নামে এক কর্মীকে রেলস্টেশনের সামনে পেয়ে কুপিয়ে জখম করে সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতাকর্মীরা। শুরু হয় আবারও সংঘর্ষ। প্রায় আধঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে আহত হয় সাত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৮০ রাউন্ড গুলি ও ৪০ রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে।
পুলিশের গুলিতে আহত হন চবি ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক জালাল আহমদ। ঘটনার পরপর বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের পাশে পুলিশ বিশ্রামাগারে অস্ত্র রাখতে গিয়ে শটগানের গুলিতে কব্জি উড়ে যায় এক পুলিশ সদস্যের। আহত পুলিশ সদস্যের নাম দিদারুল হক। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।