ক্ষমতার কাছে থাকতে সবদিকেই হাত রাখছেন এরশাদ

বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত। এ কমিশনের অধীনে নির্বাচন করতে চান না এইচ এম এরশাদ। বিরোধী দল ছাড়া কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে দালাল হয়ে মরারও ইচ্ছে নেই তাঁর।

আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মুখে এমন সব কথা বলে বেড়ালেও বাস্তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বা নেওয়ার বিষয়ে কিছুই চূড়ান্ত নয় এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা)।

জাপার তিনজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটির মূল লক্ষ্য ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা। এ জন্য নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ক্ষমতাকেন্দ্রিক সব পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলার কৌশল অবলম্বন করছেন এরশাদ। প্রায় দুই বছর ধরে নানা বিষয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করে এলেও জাপা এখনো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে রয়েছে ওই কৌশলের অংশ হিসেবে। পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে আগামী দিনে দলটির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় রেখে। তবে প্রধান দুই দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চললেও ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার লক্ষ্যে ‘অন্যদিকেও’ এরশাদের দৃষ্টি রয়েছে।

‘অন্যদিকের’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জাপার শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা বলেন, তাঁরা মনে করছেন, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে যে রাজনৈতিক সংকটের শুরু হয়েছে, তা সহসা মিটবে না। এ সংকট আরও জটিল এবং দীর্ঘায়িত হলে দেশি ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ এবং জাতীয় সরকার ধরনের নতুন কোনো ধারণা সামনে আসার সম্ভাবনা আছে। আর তাহলে, জাপার জন্য যাতে একটি সুযোগ তৈরি হয়, সেদিকেও এরশাদের দৃষ্টি রয়েছে।

অবশ্য ‘এ ধারণা সত্য নয়’ বলে দাবি করেন জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন ‘এটা নিশ্চিত যে এরশাদ কোনো পাতানো নির্বাচনে যাবেন না। কারণ তিনি ইয়াং লিডার না যে পাতানো নির্বাচনে গিয়ে ১০০ আসনে জয়ী হয়ে দল গোছাবেন। পরেরবার ক্ষমতায় যাবেন।’

জাপার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচন নিয়ে দলটির অবস্থান এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে এরশাদ কখনো আওয়ামী লীগের প্রতি নমনীয়, আবার কখনো বিএনপি ঘেঁষা কৌশল নিচ্ছেন। গত ২৭ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে এরশাদের কথিত কথোপকথন নিয়ে যে প্রচারণা চলছে, সেটাও তা এরশাদের কূটকৌশলের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের শেষ সময়ে বাড়তি কোনো সুবিধা লাভের আশায় এ গুজব ছড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন জাপার কোনো কোনো নেতা।

এই কথোপকথন সম্পর্কে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী জাপার কোনো পক্ষই নিশ্চিত করতে পারেনি। জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর আহমদ বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। আর আনিসুল ইসলাম মাহমুদের ভাষ্য, খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার কথাটি ঠিক না। এগুলো কেউ ছড়িয়েছে।