অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য

ঋণে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত ২১ সংস্থা

ban

ঋণ নিয়ে তা শোধ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। ঋণের দায়ে জর্জরিত এমন ২১ সংস্থার কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণের পরিমাণ বছরে বছরে বেড়েই চলেছে। উপরন্তু নতুন করে অনুদান ও ভর্তুকি নিয়ে পরিচালন কাজ চালাচ্ছে সংস্থাগুলো। আবার সময়মতো ঋণ শোধ করতে না পেরে বেশ মোটা অংকের টাকা খেলাপিও হয়েছে।
উল্টো দিকে ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখা গ্রাহকের আমানত বছরের পর বছর আটকে আছে রাষ্ট্রীয় এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে। যা অনুৎপাদনশীল কাজে স্থবির পড়ে আছে। ফলে একদিকে ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ এবং অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে সে টাকা ফেরত না দেয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের গতিতে ছেদ পড়ছে।
অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৫ মতে, ২১টি প্রতিষ্ঠানের কাছে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা বকেয়া ঋণের পরিমাণ হলো ৩২ হাজার ৯৭১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপি (শ্রেণিকৃত) ঋণের পরিমাণ হলো ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য মতে, সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটির কাছেই রয়েছে মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি, টাকার অংকে যা ১১ হাজার ১৫২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
ঋণগ্রস্তের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৬২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর পর বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে বকেয়া ঋণ ৫ হাজার ১০৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) বকেয়া ঋণ ৩ হাজার ২১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বকেয়ার ঋণ ২ হাজার ৩১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বকেয়া ঋণ ১ হাজার ২১৯ কোটি ৮ লাখ টাকা, বিডবিস্নউডিবির বকেয়া ঋণ ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (বিওজিএমসি) ঋণ ৩৯৬ কোটি ১২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) ঋণ ৩০৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, বিবিসির বকেয়া ঋণ ৩০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, বিটিএমসির বকেয়া ঋণ ২৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ডেসার ঋণ ৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ঢাকা ওয়াসার বকেয়া ঋণ ৭১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন করপোরেশনের (বিএসসি) ঋণ ৩০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ঋণ ৬২ লাখ টাকা, সিপিএর ঋণ ৭০ কোটি ৬১ লাখ টাকা, এমপিএর ঋণ ৬৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বকেয়া ৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা, বিটিবির ঋণ ৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ঋণ ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ঋণ ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
খেলাপি ঋণের মধ্যে রয়েছে বিপিসির খেলাপি ঋণ ১৪ লাখ টাকা, বিটিএমসির ২৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বিএসইসির ৪০ লাখ টাকা, বিএসএফআইসির ৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, বিআরটিসির ৬০ লাখ টাকা, টিসিবির ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, বিএডিসির ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বিটিবির ১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এদিকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ঋণগ্রস্ত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের পেছনে সরকারকে বছরের পর বছর মোটা অংকের ভর্তুকি গুণতে হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বাড়তি বরাদ্দ দেয়ার পরও প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না উপরন্তু প্রতি বছরই তাদের লোকসানের পাল্লাও ভারী হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে ভর্তুকিও বাড়ছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১১টি রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে সরকার ১ হাজার ২৯১ কোটি টাকা ভর্র্তুকি দিয়েছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। এ বছর বিজেএমসি ৮৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, বিআইডবিস্নউটিসি ৫০ লাখ টাকা, আরডিএ ৪০ লাখ টাকা, বিআইডবিস্নউটিএ ১৪৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা, বিএসসিআইসি ৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, বিএসবি ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা, ইপিবি ২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বিএডিসি ২৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা, বিডবিস্নউডিবি ৭৫১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, এনএইচএ, বিএসআরটিআই ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ভর্তুকি পেয়েছে।