অভিনব কৌশলে আরও ১৮ জনের কিডনি বিক্রি

শাহারুল আলম, কালাই (জয়পুরহাট)
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অভিনব কৌশলে আরও ১৮ জনের কিডনি বিক্রির সন্ধান পাওয়া গেছে। গত ছয় মাসে নতুন করে কিডনি বিক্রি করেছেন এমন কয়েকজনের পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্রে নানা অসঙ্গতি দেখা গেছে। তাদের একজন হলেন কালাই উপজেলার উলিপুর গ্রামের বাসিন্দা আজাদুল। পাসপোর্টে তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে মো. আজাদ হোসেন। ঠিকানা দেখানো হয়েছে জাপান গার্ডেন সিটি, বাংলাদেশ-০১। অন্যজন হলেন কালাই উপজেলার বোড়াই গ্রামের বাসিন্দা জোছনা বেগম। পাসপোর্ট ও ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্রে তার নাম লেখা হয়েছে মাহফুজা বেগম। স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয়েছে সালামাইদ, গুলশান, ভাটারা, ঢাকা-১২১২।
জানা গেছে, প্রশাসনের যথাযথ মনিটরিং না থাকায় নতুন দালালচক্রের বিরুদ্ধে অভিনব কৌশলে কিডনি কেনাবেচার অভিযোগ উঠেছে। আগের চেয়ে বেশি দামে কিডনি কেনার লোভ দেখানো হচ্ছে। সরেজমিন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে
কথা বলে জানা গেছে, কিডনি বিক্রি দালালচক্রের মূল হোতা কালাই উপজেলার আবদুস সাত্তার, ঢাকার তারেক আজম ও বাগেরহাটের সাইফুল ইসলাম। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে নতুনভাবে কিডনি কেনাবেচার দালালি শুরু করেছেন কালাই উপজেলার টাকাহুত গ্রামের শাহীন, জয়পুর বহুঁতি গ্রামের আবদুল মান্নান, নারায়ণগঞ্জের মকবুলসহ আরও কয়েকজন। আগে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হতো দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু বর্তমানে কিডনি বিক্রেতারা দেশের বাইরে বিশেষত, ভারতের ব্যাঙ্গালোরে কলম্বো এশিয়া হাসপাতাল ও সিঙ্গাপুরে তাদের কিডনি প্রতিস্থাপন করাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের দালাল মকবুলের মাধ্যমে ভারতে কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে দরদামে বনিবনা না হওয়ায় ফিরে এসেছেন দুর্গাপুরের পল্লী চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম।
সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-মহল্লার অন্তত ১৮ জন ফের নতুন করে কিডনি বিক্রি করেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন উপজেলার বোড়াই গ্রামের বেলাল উদ্দীন ও তার স্ত্রী জোছনা বেগম, উলিপুর গ্রামের আজাদুল ইসলাম ও ছারভানু, কুসুমসাড়ার মোস্তফা, জয়পুর বহুঁতি গ্রামের গোলাম হোসেনের মেয়ে শাবানা ও খাদিজা, শিমরাইল গ্রামের ছাকোয়াত ও এনামুল, ফুলপুকুরিয়া গ্রামের মুসা, সুড়াইল গ্রামের সাইফুল এবং কালাই পৌরসভার থুপসাড়া মহল্লার বিপ্লব হোসেন ফকির। এ ছাড়া কিডনি বিক্রির উদ্দেশ্যে নিখোঁজ রয়েছেন জয়পুর বহুঁতি গ্রামের জাহেদা বেগম ও বায়েজিদ, পাইকপাড়ার ছাইদুর, দুর্গাপুরের সুজাউলসহ আরও অনেকে।
২০১১ সালের ৩০ আগস্ট কালাই উপজেলায় দালালদের ফাঁদে পড়ে তাদের কিডনি বিক্রির খবর প্রকাশ হয়। ওই ঘটনায় ১০ দালালকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে আইনের ফাঁক দিয়ে গ্রেফতার হওয়া ওই সব দালাল জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসেছে।
নতুন কিডনি বিক্রেতা উলিপুর গ্রামের আবুজারের ছেলে আজাদুল বলেন, ‘অর্থাভাবে আমি ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করি। এরই মধ্যে একদিন আমার রিকশায় ওঠেন চিত্রনায়ক উজ্জ্বল। নানা কথা হয়। একসময় আমার ঠিকানা ও পরিচয় পেয়ে হঠাৎ কথার মোড় ঘুরিয়ে দেন। আমাকে তার ফার্মে চাকরির প্রলোভন দেন। তার কথামতো আমি নতুন কাজে যোগ দিই। কিছুদিন পর অভাবের সুযোগ নিয়ে নায়ক উজ্জ্বল তার স্ত্রী মেরিনা আশরাফ বিউটির সুস্থতার জন্য কিডনি বিক্রির প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে আমি সাড়ে তিন লাখ টাকায় কিডনি বিক্রি করি। কিন্তু আমাকে সমুদয় টাকা দেওয়া হয়নি; বরং নায়িকা কবিতার স্বামী গোলাম কবিরকে দিয়ে আমার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, ‘অভাবী মানুষরা কিডনি বিক্রির ভয়ঙ্কর পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে স্বেচ্ছায় অঙ্গহানির পর তারা বাড়ি ফিরছেন।